ঢাকা ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৪৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪
বাংলা সিলেট ডেস্ক:
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মামলা-হামলা ও রোষাণলের ভয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন দলটির কয়েকশ’ নেতাকর্মী। গোপনে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা ভারতে প্রবেশ করেন। পালিয়ে যাওয়া নেতাকর্মীরা ভারতের গৌহাটি, শিলং, ডাউকি, জোয়াইসহ কয়েকটি এলাকায় বসবাস করছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
তবে ভারত পাড়ি দেয়া এসব নেতাকর্মীর অবস্থানের বিষয়টির চেয়ে আলোচিত হচ্ছে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার ঘটনাটি। সিলেট সীমান্ত থেকে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আটক ও সীমান্তের ওপারে ছাত্রলীগের এক সময়ের সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না নিহত হওয়ার খবরটি বেশ আলোচিত হয়েছে। তবে এরপর থেকে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর কারণে বর্তমানে পালিয়ে যাওয়ার সংখ্যা কমে এসেছে।
সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- বৃহত্তর সিলেটের কয়েকশ’ নেতাকর্মী ৫ই আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পরপরই ভারত পালিয়েছেন। প্রথম দিনই (৫ আগস্ট) সিলেট সীমান্ত দিয়ে দেশ ছাড়েন ছাত্রলীগের ৫০-৬০ জন নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে তারা দেশ ত্যাগ করেন বলে জানা গেছে।
পরবর্তীতে সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, সাবেক এমপি এডভোকেট রঞ্জিত সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদসহ বহু নেতা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন।
শিলংয়ে অবস্থান করা কয়েকজন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছেন- ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংসহ কয়েকটি এলাকায় ওখানকার পুলিশের কাছ থেকে অস্থায়ী পাসকার্ড নিয়ে অনেকেই অবস্থান করছেন। আবার অনেকেই আছেন অবৈধভাবে। রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে তেমন কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে না। ফলে বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়ে তারা নিরাপদেই বসবাস করতে পারছেন।
তবে কতোদিন পর্যন্ত তারা অবস্থান করতে পারবেন, সেটি নিয়ে চিন্তিত দেশে থাকা নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে সিলেটে দায়ের করা একাধিক মামলায়ও তারা আসামি হয়েছেন।
অপরদিকে, সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- সিলেট সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে নেতারা ভারতে প্রবেশ করেন। এসব সীমান্তের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মী ঢুকেছেন কানাইঘাটের ডোনা ও সুরইঘাট এলাকার সনাতনপুঞ্জি সীমান্ত দিয়ে।
ডোনা সীমান্তে দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় বিজিবি’র হাতে আটক হয়েছিলেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক। গ্রেপ্তারের পর বহুল আলোচিত এ সাবেক বিচারপতি নিজেও জানিয়েছিলেন- সীমান্তে দালাল ধরে তিনি ভারতে প্রবেশের চেষ্টা চালান। পরে ওই দালালরাই তাকে মারধর করে সঙ্গে থাকা ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে।
এ উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের মেম্বার নাজিম উদ্দিনের মতে; সীমান্তের চোরাকারবারি সাদ্দাম, রাজু, রহিমসহ কয়েকজন ডোনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে নেতাকর্মীদের পাচার করে ভারতে পাঠিয়েছে। বিচারপতি আটকের পর ঘটনাটি জানাজানি হলে তারা বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছে। আলোচনায় আসা সাদ্দাম হোসেন কুখ্যাত চোরাকারবারি। তার বিরুদ্ধে চোরাচালানের ঘটনায় ১৩টি মামলা হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন জানিয়েছেন, সাবেক বিচারপতি আটকের পর সীমান্ত দিয়ে নেতাকর্মীদের পাচারের খবরটি তার কাছে এসেছে। সাদ্দাম ও রহিম ওই সীমান্ত এলাকার সব অপরাধের মূল হোতা। সাবেক এমপি রঞ্জিত সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ এ সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন- আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক আলী পান্নাও ওই সীমান্তের আরেকটি পয়েন্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। ডোনা সীমান্তের ওপারে ভারতের অংশে একটি টিলার পাদদেশে তার মরদেহ পাওয়া যায়। সীমান্তের দালালরাই তাকে হত্যা করে সঙ্গে থাকা সব টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে- ডোনা, সোনাতনসহ কয়েকটি সীমান্তে নেতাকর্মীদের পাচারে সাবেক চেয়ারম্যান সোলেমান আহমদ, মেম্বার মোস্তাক আহমদের নাম আলোচনায় এসেছে। তবে তারা দু’জনই অস্বীকার করেছেন অভিযোগটি।
সাবেক চেয়ারম্যান সোলেমান আহমদ জানিয়েছেন- তিনি জেলা বিএনপি নেতা। তার কর্তব্য হচ্ছে দুর্বৃত্তদের ধরিয়ে দেয়া। যেটি তিনি করেছেনও। কারা এই সীমান্ত এলাকায় মানুষ পাচার করে সবাই জানে বলে জানান তিনি।
একই কথা মেম্বার মোস্তাক আহমদেরও। তিনি তথ্য দিয়ে জানান- সীমান্তে দালাল হিসেবে রাজু, শামীম, সাব্বির, সিরাজ, কাইয়ুম, সাজু, সাদ্দাম, কালামসহ কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। এলাকার লোকজন তাদের সবাইকে চেনেন। এখানে আমার নাম উত্থাপন করা হচ্ছে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে।
এদিকে গোয়াইনঘাটের মাতুরতল সীমান্ত এলাকা দিয়ে শতাধিক নেতাকর্মীদের ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হয়েছে। গোয়াইনঘাট ছাত্রলীগের সভাপতি সুফিয়ান ও সাধারণ সম্পাদক রাজীবের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মী এ সীমান্ত দিয়ে পাড়ি জমান। তারা নিজেরাও বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।
সীমান্ত চোরাকারবারি দুলালসহ কয়েকজন তাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছেন হাজীপুর, মাতুরতল এলাকার বাসিন্দারা। তারা জানিয়েছেন- ওই এলাকায় বিজিবি ক্যাম্প আক্রান্ত হওয়ার পর সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা কম ছিল। এই সুযোগে ওই এলাকা দিয়ে নেতাকর্মীরা ভারতে পালায়। এ ছাড়া আসামপাড়া, সোনাটিলা দিয়েও নেতাকর্মীরা ভারতে প্রবেশ করেন।
সম্পাদকীয় কার্যালয় : আছমান ম্যানশন, কদমতলী সিলেট। নিউজ : ০১৬-৪২৫০৫৪৬৬
Design and developed by DHAKA-HOST-BD