ঢাকা ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৩০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
বাংলা সিলেট ডেস্ক: ভারতে সিলেট আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের চার নেতার গ্রেপ্তার নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। কী কারণে তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন এ নিয়ে নানামূখী কথা উঠেছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পালিয়ে গিয়ে প্রতিবেশী দেশটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। তারমধ্যেই গত রবিবার কলকাতার একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে মামলা মেঘালয়ে হওয়ায় তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় শিলংয়ে।
কিন্তু কী অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হলো? এই বিষয়ে কয়েক রকম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের কিছু সংবাদপত্রে খবর এসেছে, ধর্ষণের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু ভারতের সংবাদপত্রের খবর ভিন্ন। সেখানে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবৈধ অনুপ্রবেশের পাশাপাশি ট্রাকচালকদের সঙ্গে মারামারি বাধানো।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির অনেক নেতা সিলেটের ডাউকি সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পাড়ি জমায়; তাদের কেউ কেউ শিলংয়েই রয়েছে, কেউ সেখান থেকে চলে গেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায়।
তাদের মধ্যে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য ইলিয়াছ আহমদ জুয়েল, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি এবং সিলেট মহানগর যুবলীগের সহ সভাপতি আব্দুল লতিফ রিপন রবিবার কলকাতায় গ্রেপ্তার হন।
যেভাবে গ্রেপ্তার
কলকাতায় অবস্থানরত সিলেট জেলা ছাত্রলীগের একজন নেতা বলেন, কলকাতা শহরের হাতিয়াড়া এলাকার একটি বাসায় তারা ছিলেন। সেখান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রবিবার বারাসাত আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদেরকে শিলংয়ে স্থানান্তরের আদেশ দেয়।
কলকাতায় থাকা সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা জানান, ওই বাসা থেকে পাঁচজনকে ধরেছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। তবে আসামি না হওয়ায় সাহেল আহমদ নামের একজনকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
যে মামলায় ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাতে আসামি মোট ছয়জন। বাকি দুজন সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ এবং সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিটু পলাতক।
ভারতে থাকা ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা জানান, গত ৫ আগস্টের পর তারা সীমান্ত পাড়িয়ে দিয়ে শিলং গিয়ে প্রথমে একটি হোটেলে উঠেছিলেন। পরে একটি বাসা ভাড়া করেন। তিন মাস পর গত ৫ নভেম্বর তারা শিলং থেকে কলকাতা গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর মেঘালয়ের ডাউকি থানার একটি মামলায় তারা গ্রেপ্তার হন।
অভিযোগ কী
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে এই গ্রেপ্তারের খবরের শিরোনামে ধর্ষণের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনাস্থল শিলং। তবে এই তথ্যের উৎস কী, তা প্রতিবেদনে স্পষ্ট নয়।
প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, কলকাতার আওয়ামী লীগ নেতাদের সূত্রে এই খবর জানা গেছে। আবার নাম উল্লেখ না করে স্থানীয় সূত্রের কথাও বলা হয়েছে কিছু প্রতিবেদনে।
চার আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তারের এই খবরটি মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার ডিজিটালে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুপ্রবেশ ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে মেঘালয় পুলিশ কলকাতার নিউটাউন থেকে আওয়ামী লীগের চার নেতা ও কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে আনন্দবাজার জানায়, রবিবার নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাট থেকে মেঘালয় পুলিশই ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে, অভিযানে সহযোগিতা করে কলকাতা পুলিশ।
বারাসত আদালতের আইনজীবী আসলামউজজামান বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ, ছিনতাই, জাতীয় সড়কে ডাকাতি, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত ও মারধরের অভিযোগে রবিবার বারাসত আদালতে আনা হয়। ট্রানজ়িট রিমান্ডের জন্য আনা হলেও আদালত ছুটি থাকায় বিচারকের সামনে হাজির করানো হয়নি। ধৃতদের শিলং নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, মেঘালয়ে এই চারজনসহ মোট ছয়জনের নামে মামলা রয়েছে। বাকি দুজন আফসার আজিজ ও দেবাংশু দাস মিঠু পলাতক।
আগের দিন ৯ ডিসেম্বর মেঘালয়ের সংবাদপত্র শিলং টাইমসেও আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেপ্তারের খবরটি আসে। পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডাওকিতে ট্রাকচালকদের সঙ্গে মারামারি সংক্রান্ত মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার চারজনকে ডাওকি থানার ওই মামলায় পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলেও জানিয়েছে শিলং টাইমস।
মেঘালয় পুলিশের মহাপরিচালক নংরাং বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “ওই চারজনের বিরুদ্ধে ডাউকি থানার একটা মামলা ছিল। কোনও ধর্ষণের অভিযোগ নেই এদের বিরুদ্ধে। ডাউকি থানায় এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার চারটি ধারা এবং বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারায় অভিযোগ ছিল। সেই মামলাতেই কলকাতা থেকে এদের গ্রেপ্তার করে আনা হয়েছে।”
মামলায় অভিযোগ অবৈধ অনুপ্রবেশ, ছিনতাই ও ডাকাতি বলে মেঘালয়ে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
তাদের গ্রেপ্তারের অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে ভুল খবর প্রকাশের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, “সত্যাসত্য যাচাই না করে বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষের চরিত্র হনন করা অত্যন্ত নিম্ন রুচির পরিচায়ক।”
নাদেল জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের আইনি সহায়তা দিতে শিলং জেলা আদালতের আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে।
সম্পাদকীয় কার্যালয় : আছমান ম্যানশন, কদমতলী সিলেট। নিউজ : ০১৬-৪২৫০৫৪৬৬
Design and developed by DHAKA-HOST-BD