সিলেটের ক্যাম্পাসগুলোতে যা করছে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির

প্রকাশিত: ২:১৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০২৫

সিলেটের ক্যাম্পাসগুলোতে যা করছে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির

বাংলা সিলেট ডেস্ক: পাঁচ আগস্টের পট পরিবর্তনের আগে সিলেটের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাস ছিল ছাত্রলীগের দখলে। প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া আর পেশিশক্তি প্রয়োগের কারণে ক্যাম্পাসে দাঁড়াতে পারেনি অন্যান্য ছাত্র সংগঠন। ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা।
বিশেষ করে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরকে প্রতিহত করতে মারমুখী ছিল ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। শিবির তাড়ানোর নাম করে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা পুড়িয়ে দিয়েছিল ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ও সরকারি কলেজের ছাত্রাবাস। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরও মারধর করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। এই অবস্থায় ছাত্রলীগের দাপটের কাছে অসহায় হয়ে অন্যান্য সংগঠনকে অনেকটা গোপনে চালাতে হয়েছে দলীয় কার্যক্রম।

সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে ৫ আগস্টের পর নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ছাত্রলীগকে। সেইসব দাপুটে নেতারাও দিয়েছেন গা ঢাকা। এই অবস্থায় নবোদ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। সকল ক্যাম্পাসে সদস্য সংগ্রহ ও কমিটি গঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রদল। আর ছাত্রশিবিরও ইতোমধ্যে সকল ক্যাম্পাসে কমিটি গঠন করে জোরদার করেছে তাদের কার্যক্রম।

পাঁচ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সারাদেশের মতো সিলেটেও ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দেন। এর মধ্যে কেউ পাড়ি জমান দেশের বাইরে, আর কেউ দেশের ভেতর গা ঢাকা দেন। অথচ আগের দিন পর্যন্ত ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের সাথে একজোট হয়ে প্রকাশ্যে গুলি ছুঁড়েছেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭ বছর সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জিম্মি করে রেখেছিল ছাত্রলীগ।
বর্তমানে ক্যাম্পাসগুলো ছাত্রলীগমুক্ত হওয়ায় নতুন উদ্যমে কার্যক্রম শুরু করেছে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল। এতোদিন ছাত্রলীগের তান্ডবের ভয়ে ক্যাম্পাস কমিটি প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে পারেনি ছাত্রশিবির। এখন সিলেটের প্রতিটি ক্যাম্পাসে তাদের কার্যক্রম জোরদার হয়েছে। সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী গত জানুয়ারিতে প্রতিটি ক্যাম্পাসে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছে সংগঠনটি।

এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি শাহীন আহমদ জানান, ৫ আগস্টের আগেও ক্যাম্পাসগুলোতে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল। কিন্তু ক্যাম্পাসে সহবস্থান না থাকায় তারা প্রকাশ্যে কমিটি ঘোষণা করেননি। গত জানুয়ারিতে মহানগরের আওতাধীন ২৬টি ইউনিটে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন ক্যাম্পাসগুলোতে রাজনৈতিক সহাবস্থান ফিরে আসায় সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও জোরদার হয়েছেল বলে জানান তিনি।

এদিকে, সিলেট জেলা ও মহানগরীর হাইস্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম শুরু করেছে ছাত্রদল। দীর্ঘদিন পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমিটি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ১৩টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে। টিমগুলো সকল প্রতিষ্ঠানে ফরম পূরণের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ করেছে। ইতোমধ্যে ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি অনুমোদন ও ২৯টির কমিটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সিলেট ছাত্রদলের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য কেন্দ্র থেকেও একটি টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে।

সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসেন দিনার জানান, প্রতিটি ক্যাম্পাসে নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। বড় ইউনিটগুলোতে ভোটের মাধ্যমে ও ছোটগুলোতে মতামতের ভিত্তিতে কমিটি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বত:স্ফূর্তভাবে ছাত্রদলের সদস্যপদ গ্রহণ করছেন। ছাত্রদল সন্ত্রাসমুক্ত ও সহাবস্থানের ক্যাম্পাস গঠনের চেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।