ঢাকা ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৫০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৪, ২০২৫
বাংলা সিলেট ডেস্ক:
সানজানা রহমান যুথী
পোশাক মানুষের পরিচয় বহন করে। কোনো জাতি কোন সংস্কৃতি থেকে এসেছে আমরা সহজেই তাদের পোশাক পরিচ্ছদ দেখে বলতে পারি। স্থান কালভেদে পোশাক পরিচ্ছদের বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা যায়। ঠিক তেমনি বাঙালিদের পোশাক পরিচ্ছদেও আলাদা বৈচিত্র্য আছে। যা বাঙালির গর্ব, বাঙালির অহংকার। বাঙালিদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক অন্য যে কোনো সংস্কৃতি থেকে কোনো অংশে কম নয়।
প্রাচীন বাংলার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, আমাদের পোশাকধারার মধ্যে ছিল মাটির গন্ধ, গাছের রং ও হাতের স্পর্শ। জামদানি, নকশিকাঁথা, মসলিন কিংবা খাদি-এই সব কাপড় শুধু আরামদায়কই ছিল না, বরং প্রতিটি সেলাই ও বুননের মধ্যে ছিল একটি গল্প। বিশেষ করে মসলিন, যা এক সময় সারা পৃথিবীর রাজাদের মন জয় করেছিল, তা ছিল বাংলার গর্ব। ব্রিটিশদের শোষণ আর কারিগর নিধনে সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গেলেও, এখনো জামদানি, নকশিকাঁথা, সিল্কের মতো কিছু ঐতিহ্যবাহী পোশাক আমাদের পোশাক ভাণ্ডারে বেঁচে আছে।
তবে সামাজিক পট পরিবর্তনে অনেক কিছুরই আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন তরুণ প্রজন্মের একদল স্কার্ট, টপস, টি- শার্ট, কোট-ব্লেজার, জ্যাকেট ইত্যাদি পশ্চিমা বিশ্বের পোশাক পরিচ্ছদে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বাঙালিদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। শুধু বিশেষ কোনো দিন, উৎসবে বাঙালিরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে।
তবে দৈনন্দিন জীবনে পাশ্চাত্য সভ্যতার পোশাকে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখন প্রশ্ন হতে পারে কেন তরুণ প্রজন্মের একাংশ পাশ্চাত্য সভ্যতার পোশাকের দিকে ঝুঁকছে? বিশ্বায়নের এই যুগে প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে যে কোনো দেশের মানুষ সহজেই অন্য যে কোনো দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে। ফলে এক সময় অন্যদের সংস্কৃতির প্রভাব নিজেদের ওপরও পড়ে। যার ফলশ্রুতিতে আমরা ধীরে ধীরে অন্যদেশের সংস্কৃতিতে আগ্ৰহী হয়ে পড়েছি।
তরুণ প্রজন্মের আরেকাংশ দেশীয় পোশাক পরিধানে অভ্যস্ত। তাদের মধ্যে অনেকেই ভালোবেসে সংখ্যক মানুষ লুঙ্গি, শাড়ি, ফতুয়া, পাঞ্জাবি প্রভৃতি দেশীয় পোশাক পরিধান করে। এছাড়াও দেশীয় বড় বড় পোশাক ব্রান্ডেও দেশীয় পোশাকের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা করছে। এখনকার দেশীয় পোশাকে দেখা মেলে গাছ, লতা-পাতার, গ্ৰাম বাংলার জনজীবনের ছবি। ফলে তরুণ প্রজন্ম আবারও কিছুটা হলেও ফিরে আসছে নিজের শিকড়ের দিকে।
দেশীয় পোশাক হারিয়ে গেলে হারিয়ে যাবে আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতি। বিলুপ্ত হয়ে যাবে দেশীয় শিল্পের প্রসার। যার ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিকভাবে আমাদের দেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ বাঙালির দেশীয় পোশাক শিল্পের চাহিদা কমে গেলে পোশাক শিল্পের কারিগরা বিশেষ করে জামদানি, টাঙ্গাইল সাড়ি, তাঁত কারিগরেরা তাদের বংশানুক্রমিক পেশা হারাবেন।
তাই শুধু উৎসব বা বিশেষ দিনেই ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে দায়িত্ব শেষ করা উচিত নয়। আমাদের উচিত প্রতিদিনের জীবনে, কাজের জায়গায়, এমনকি ঘরোয়া পরিধানেও দেশীয় কাপড় ও ডিজাইনকে প্রাধান্য দেওয়া। এতে করে দেশীয় তাঁতশিল্প ও কারিগরদের বাঁচিয়ে রাখা যাবে। দেশের অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ও সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রগুলোতে দেশীয় পোশাক ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। স্কুল-কলেজে যদি ‘দেশীয় পোশাক দিবস’ পালন করা হয়, কিংবা কোনো কো-কারিকুলার কার্যক্রমে ঐতিহ্যবাহী পোশাকের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। একইভাবে গণমাধ্যমেও দেশীয় পোশাকের উপস্থাপন আরও বাড়াতে হবে।
সম্পাদকীয় কার্যালয় : আছমান ম্যানশন, কদমতলী সিলেট। নিউজ : ০১৬-৪২৫০৫৪৬৬
Design and developed by DHAKA-HOST-BD