‘বিচারকরা কথা না শুনলে বান্দরবান বদলি করা হতো, কি বিচার করবে’

প্রকাশিত: ৫:৩৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৩, ২০২৫

‘বিচারকরা কথা না শুনলে বান্দরবান বদলি করা হতো, কি বিচার করবে’

বাংলা সিলেট ডেস্ক:  বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়েছে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এর শুনানি শুরু হয়।

শুনানিতে রিটকারি আইনজীবী শিশির মনির রিট করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ থাকার কারণে অতীতে বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। এমনও হয়েছে রাতে কোর্ট বসেছে। ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য একদিনেই নিতে হবে এমন কথা বলে রাত পর্যন্ত কোর্ট চলেছে। বলা হয়েছে উপরের নির্দেশে এটা। এগুলো দেখে হৃদয় রক্তক্ষরণ হয়। শিশির মনির হাইকোর্টকে আরও বলেন দেশে এখন নিম্ন আদালতের বিচারক আছে ২১৯৩ কিংবা ২১৮৩ জন বিচারক রয়েছেন। যদি এই ১১৬ করা যায় তবে অনেক মামলা আর হাইকোর্টে আসতে হবে না। নিচের কোর্টেই সমাধান হবে অনেক মামলার।

রিটকারি আইনজীবী জানান আইন মন্ত্রণালয়ের তদবির না শুনলে বান্দরবান বদলি করা হতো। কি কাজ করবে বিচারকরা নিজেদেরই তো সেভ করতে পারেনা। এসব দেখে আমাদের কষ্ট হয়। অথচ আমরা চাইলে তাদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারি এই ১১৬ বাতিল করে।

এ সময় হাইকোর্ট বলেন, তাহলে একটা অন্তরজ্বালা থেকেই করেছেন? এসময় রিটকারি আইনজীবী হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ান।

এর আগে গত ২০ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদর বেঞ্চ বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে বেঞ্চ গঠন করে দেন।

মামলাটি বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। তবে গত ২৪ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় সেই বেঞ্চটি ভেঙে যায়। এরপর সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য নতুন বেঞ্চ নির্ধারণের আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি গত বছরের ২৫ আগস্ট ১০ জন আইনজীবীর পক্ষে মূল সংবিধানের ১৯৭২ সালের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন। পরে হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চায়—বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না। নতুন বেঞ্চে রুলের শুনানি শিগগিরই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

বর্তমানে প্রযোজ্য (সংশোধিত) সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে।’ কিন্তু ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, ‘বিচারকার্য বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্বে নিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকবে।’

বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি ও শৃঙ্খলাবিধির ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব রয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।