ঢাকা ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৩৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০২৫
বাংলা সিলেট ডেস্ক:
‘সিলেট বিভাগের টোলপ্রাজাগুলোর টেন্ডার নিয়ে ‘আবারো শুরু হয়েছে তেলেসমাতি ৷ সড়ক ও জনপথ (সওজ) সিলেট জোনের অধিনে ৬টি টোলপ্রাজার টেন্ডার আহ্বান করে । এতে অংশ নিয়েছেন বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের ‘ঘনিষ্ট সহচররা বর্তমানে টেন্ডারগুলো মূল্যায়নের পর্যায়ে রয়েছে। আর এই টেন্ডারগুলো বাতিলে উপদেষ্টা ও সচিব বরাবরে স্বারকলিপিও দেওয়া
হয়েছে।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়েও ফ্যাসিবাদের দোসর প্রতিষ্ঠানগুলো টেনারের নামে সিলেট বিভাগের ‘টোলসমুহ হাতিয়ে নিতে তৎপর রয়েছে। সওজের নানামুখী শর্তের টেন্ডারে অংশ নিতে পারে না বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ । এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে
বিগত দিনের মতো টোল সমুহ হাতিয়ে নিচ্ছে ফ্যাসিবাদি গোষ্ঠীর দোসর প্রতিষ্ঠানগুলো ।
টেন্ডার হওয়া সিলেটের ছয়টি টোলপ্রাজার মধ্যে ‘রয়েছে-নগরী সংলগ্ন হযরত শাহপরান (রহ.) সেতু, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শেরপুর সেতুর চোলপ্লাজা, কুশিয়ারা নদীর ওপর ফেঞ্চুগঞ্জ সেতুর ‘টোলপ্লাজা, সিলেট-তামাবিল-জাফলং সড়কে রুত্তনব এমপুর টোল, প্লাজা, সুনামগঞ্জে সুরমার ওপর ছাতক সেতুর টোলপ্লাজা এবং রানীগঞ্জ সেতুর চোলপ্লাজা।
২০২৪ সালের ১৮ মার্চ এসব টোলপ্লাজার ৩ বছর মেয়াদী টেন্ডারের দরপত্র উন্মুক্ত করে সওজ সিলেট ডিভিশন । অনুসন্ধানে জানা গেছে, সওজের যোগাযোগীমূলে এসব _ টোলপ্লাজার টেন্ডারে অংশ নিয়েছেন দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে থাকা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের পার্টনাররা। এরমধ্যে শাহপরান সেতুর টোলপ্লাজার টেন্ডারে অংশ _ নেয় ১৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তন্মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ কোটি
৩৩ লাখ ৭ হাজার টাকা ‘দরদাতা রাজধানী ঢাকার ‘মীরপুরের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস লিমিটেড ৷ এই টোল প্লাজায় টেন্ডারে অংশ নেন বিদেশে পলাতক থাকা সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফুর ‘রহমানের প্রতিষ্ঠান ৷ এই প্রতিষ্ঠান ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮শ’ টাকা দরপত্র দেয়। এছাড়াও লুৎফর ‘রহমানের ব্যবসায়ীক পার্টনার সিলেটের শিবগঞ্জের ‘ওহিদুজ্জামান চৌধুরী ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৮শ’ টাকা দরপত্র দাখিল করেন। এই টোলপ্রাজায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ওয়ার্কস্পেস ইনফো টেক লিমিটেড ৮ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭৬০ টাকা ৭১ পয়সার দরপত্র দাখিল করেন এছাড়া
এই টোলপ্লাজার টেনডারে অংশ নেয় ঢাকার আলোচিত প্রতিষ্ঠান এমএম বিস্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ।
প্রতিষ্ঠানটি ৭ কোটি ৫৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮শ’ টাকা দরপত্র দেয়। কোম্পানীটির মালিক মহিউদ্দিন শেখ হাসিনার আত্মীয় লিটন চৌধুরী, সোহেল চৌধুরী, নিক্সন চৌধুরীদের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ‘সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শেরপুর সেতুর টোলপ্লাজার টেন্ডারে অংশ নেয় ১২টি প্রতিষ্ঠান । এরমধ্যে সর্বোচ্চ ১৪ কোটি ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকার দরদাতা সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ ৫৭ সাদিপুর আবাসিক এলাকার ওহিদুজ্জামান চৌধুরী । তিনি পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা
লুৎফুর রহমানের (৩-এর পাতায় দেখুন) প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক পার্টনার । এই টেন্ডারে অংশ নেন সিলেট নগরের শিবগঞ্জ ব্রাক্মণপাড়ার মেসার্স জামিল ইকবাল । প্রতিষ্ঠানটি ৪ কোটি ‘৪১ লাখ ৮হাজার ৬০০ টাকা দরপত্র দেয় । এই প্রতিষ্ঠানের মালিক বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের ঘনিষ্ট হিসেবে সওজের বড় বড় কাজের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন ৷ এই টেন্ডারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ‘রাজধানী ঢাকার এশিয়ান ট্রাফিক টেকনোলজিস্ট লিমিডেট ।
প্রতিষ্ঠানটি ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার ৬০০ টাকা দরপত্র দেয়। ফেঞ্চুগঞ্জ টোলপ্লাজার সর্বোচ্চ দরদাতা রাজধানী ঢাকার ওয়ার্কস্পেট ইনফোটেক । প্রতিষ্ঠানটি ৮ কোটি ১০ লাখ ৩৮ হাজার ১০৪ টাকা ৩৪ পয়সা দর দেয় ৷ এই টেস্ডারেও অংশ নেন নেন সিলেট নগরের শিবগঞ্জ ব্রাক্মণপাড়ার আলোচিত প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামিল ইকবাল । প্রতিষ্ঠানটির দরপত্র ছিল ৩ কোটি ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০টাকা ৷ এই টোলপ্লাজায়ও অংশ নেন সিলেট নগরের শিবগঞ্জ ৫৭ সাদিপুর আবাসিক এলাকার ওহিদুজ্জামান চৌধুরীর নামীয় প্রতিষ্ঠান ।
প্রতিষ্ঠানটি ৭ কোটি ৪৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮০০ টাকা দরপত্র দেন । এখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা মেসার্স আরআর করপোরেশন ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৭৭ হাজার ১৫৬ টাকা ৮৪ পয়সা । ‘সিলেট-তামাবিল-জাফলং সড়কে রুস্তুমপুর টোল প্লাজার টেন্ডারে ১৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় ৷ এরমধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওহিদুজ্জামান চৌধুরী ১২ কোটি ৫০ লাখ ১২ হাজার ৬০০ টাকা । দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা মার্গানেট ওয়ান লিমিটেড ১১ কোটি ৭৯ লাখ ৮৯ হাজার ৪৪০ টাকা ১৭ পয়সা ।
এই টোলপ্লাজায়ও অংশ নেন মেসার্স জামিল ইকবাল, দরপত্র দেন 8৪কোটি ৪১ লাখ ৮৬ হাজার টাকার ৷ এছাড়াও আলোচিত এমএম বিল্ডার্স দরপত্র দেয় ১০ কোটি ৩৪ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা । সুনামগঞ্জে সুরমার ওপর ছাতক সেতুর টোলপ্লাজার টেন্ডারে ১২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এরমধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন গোলাপগঞ্জ উপজেলা
আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. লুৎফুর রহমানের প্রতিষ্ঠান জন্মভূমি নির্মাতা ।
প্রতিষ্ঠানটির দরপত্র ৯ কোটি ৪৯ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ টাকা । দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান এমএম বিস্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড । প্রতিষ্ঠানটির ‘দপরত্র ৭ কোটি ৫৩ লাখ ৪১ হাজার ৮০০ টাকা । এখানেও ৩ কোটি ৬ লাখ ‘৯৪ হাজার ৮০০ টাকা দরপত্র দেয় সিলেটের প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামিল ইকবাল ।
এছাড়া সুনামগঞ্জের রানীগঞ্জ সেতুর টোলপ্লাজার টেন্ডারে ১১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় । এরমধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা বিদেশে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফুর রহমানের প্রতিষ্ঠান জন্মভূমি নির্মাতা । প্রতিষ্ঠানটি ১৪ কোটি ৯৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬০০ টাকা দরপত্র দেয় । এখানেও সিলেটের প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামিল ইকবাল ৪ কোটি ২ লাখ ২৮ হাজার ৬০০ টাকা দরপত্র দেয় । এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ফাইবার এট হোম লিমিটেড ১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার ৪সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট ম্ত্রানালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে ১৯ টাকা দরপত্র দেয়। এছাড়াও সারা দেশের মোট ৩৭টি টোলপ্লাজায় টেন্ডার দেয় সড়ক ও জনপথ ৷
কিন্তু এসব টোলপ্লাজা বিগত সরকারের দোসর প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিয়ে সওজ কর্মকর্তাদের আধিপত্য খাটিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ‘তুরুকভাগের মারজান সিদ্দিকী কর্তৃক ১৭ মার্চ দেওয়া এই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসররা টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে মনগড়া টেন্ডারের নাম করে লুটপাট করে আসছে ৷
এতে সরকার/ জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়েও ফ্যাসিবাদের দোসররা সিলেট বিভাগের টোল সমুহ টেন্ডারের নামে হাতিয়ে নিতে তৎপর রয়েছে ।
সওজের নানামুখী শর্তের কারণে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান টোল সমুহের টেন্ডারে অংশ নিতে পারছে না ৷ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিগত দিনেও টোল সমুহ হাতিয়ে নেয় ফ্যাসিবাদি গোষ্ঠীর দোসর প্রতিষ্ঠান । বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ পেলে মারাত্মক অসন্তোষ দেখা দেবে এবং টোল আদায় কার্যক্রম বিস্মিত হয় । তাই ফ্যাসিবাদের দোসর কালো ‘তালিকাডক্ত প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করার দাবি ‘জানানো হয়। অভিযোগের অনুলিপি সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলীকেও দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন অভিযোগ পাওয়ার
বিষয়টি অস্বীকার করেন । তবে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেন ।
সম্পাদকীয় কার্যালয় : আছমান ম্যানশন, কদমতলী সিলেট। নিউজ : ০১৬-৪২৫০৫৪৬৬
Design and developed by DHAKA-HOST-BD