সিলেটের ডেভিল রাশেদ : আ. লীগ নেতার ছায়ায় অবৈধ সস্পদ, লাইসেন্স বাঁচাতে বিএনপি নেতাদের তদবির

প্রকাশিত: ১২:১৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০২৫

সিলেটের ডেভিল রাশেদ : আ. লীগ নেতার ছায়ায় অবৈধ সস্পদ, লাইসেন্স বাঁচাতে বিএনপি নেতাদের তদবির

বাংলা সিলেট ডেস্ক: এসএসসি রেজাল্টের জাল সনদ ব্যবহার করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধন অধিদপ্তর থেকে দলিল লেখকের লাইসেন্স করার অভিযোগে ফেঁসে গেছেন সিলেট দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান রাশেদুজ্জামান রাশেদ। (সনদ নং-৩১৭)। এছাড়াও পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পরিচয়ে সিলেট সদর সাবরেজিস্ট্রারী অফিসে দলিল জাল-জালিয়াতির অভিযোগসহ তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ অহরহ। দলিল লিখনির ২৭০ টাকা সরকারি খরচ হলেও একেকটি দলিল থেকে নিম্নে ৪০ হাজার টাকা আর ঊর্ধ্বে কয়েক লাখ টাকা নেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাশেদুজ্জামান রাশেদ ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিছবাহ সিরাজে অতি ঘনিষ্ঠজন এবং পলাতক সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের ছিলেন আস্তাভাজন একজন ভক্ত। সেই সময়ে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের শেল্টারে তিনি পেয়ে যান দুর্নীতির ‘আলাদিনের চেরাগ’। বিনিময়ে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজও পেতেন তার দুর্নীতির বিশাল একটি টাকার অংশ। প্রায় এক যুগ ধরে এই চেরাগের মাধ্যমে সিলেট সদর সাবরেজিস্ট্রারী অফিসে দলিল জাল-জালিয়াতি করে গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জের কতোয়াল পুরের উত্তরপাড়ায় দুই ভাইয়ের নামে কিনেছেন ২ একর জমি, প্রায় ২ কেটি টাকা খরচ করে বানিয়েছেন বাংলো বাড়ি, করেছেন বিশাল মাছের ফিসারি!

আওয়ামী লীগ সরকার পালাবার দিন গেলো বছরের ৫ আগস্ট সুযোগ বুঝে চতুর রাশেদুজ্জামান রাশেদ ওই দিনই খোলস পাল্টান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্র-জনতার বিজয় উৎসবে ৫ আগস্ট নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে ছাত্রদের সাথে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন! এরআগে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে তার দেখা মিলেনি তার বরং আওয়ামী লীগ নেতাদের গুনগান ও তোষামোদি করতে দেখা যায়!

নিজের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ শুনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও দু’লাইন লিখে নিজের ‘সাফাই’ বা প্রতিবাদ করেন ডেভিল রাশেদ। বরং বর্তমানে তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডিটি বন্ধ রেখেছেন তিনি।

চতুর রাশেদুজ্জামান রাশেদ নিজের রাজনৈতিক পদ পরিবর্তন করেছেন। এর টার্গেট সিলেট সদর সাবরেজিস্ট্রারী অফিস। সাবরেজিস্ট্রারী অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে, টাকার বিনিময়ে সিলেট দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের মতও এই আলাদিনের চেরাগের একটি অংশ পাবেন এই আশ্বাসে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতাকে সে ম্যানেজ করে। বাগিয়ে নেয় সিলেট বিমানবন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক পদ। যে কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো এ্যাকশনে যাচ্ছে না তারা!

বর্তমান পদধারী এই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৩ তার দলিল লেখকের লাইসেন্স জন্য সুপারিশও করেছিলেন আওয়ামী জোটের নেতা রাশেদ খান মেনন। এই লাইসেন্সের কারণে প্রায় ১ যুগ ধরে তিনি দলিল লেখক। আওয়ামী লীগ সরকার পালাবার পর তাকে সিলেট বিমানবন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক করায় সিলেটের গণমাধ্যম গুলো ঢালাওভাবে তার বিরুদ্ধে ‘ডেভিল আখ্যা’ দিয়ে সংবাদও প্রকাশ করে। তবে এতে টনক নড়েনি সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের!

তবে টনক নড়ে সিলেট সদর সাবরেজিস্ট্রারী অফিসের। ঘটন করা হয় তদন্ত কমিটি। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার মো. জহুরুল ইসলাম। তদন্ত কমিটির প্রধান কোম্পানীগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার মো. ফখরুল ইসলাম। তদন্ত রিপোর্টের পর বাতিল হবে তার দলিল লেখকের লাইসেন্স এবং নেয়া হবে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং রীতি অনুযায়ী প্রতারণা মামলাও হবে বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের প্রক্ষিতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার মো. জহুরুল ইসলাম।

এদিকে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধন অধিদপ্তর থেকে করা দলিল লেখকের লাইসেন্সটি বাঁচাতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিএনপি নেতাদের মাধ্যমে তদন্ত কমিটির প্রধান কোম্পানীগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার মো. ফখরুল ইসলামকেও তদবির করা চেষ্ঠা করছেন ডেভিল রাশেদ। তবে ঘটনা সত্য হওয়ায় সেই সব বিএনপি নেতারা বিতর্কে জড়াবেন ভেবে রাশেদকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। রাশেদের এমন কর্মকান্ড জাতীয় পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে। এমন কর্মকান্ডে কলঙ্কিত করেছে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলকে। এসকল অভিযোগ গিয়েছে কেন্দ্রে এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে।

তার এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রথমেই প্রকাশ করে। ঘটনাটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। প্রতিবেদক কে ম্যানেজ করতে একটি খামে টাকা নিয়ে আসেন ডেভিল রাশেদ। এছাড়াও নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার করেন প্রতিবেদকের কাছে। যার অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে। প্রয়োজনে তাও প্রকাশ করা হবে।

অপরদিকে, তার অপকর্ম এবং অবৈধ সম্পদের একটি অভিযোগ গিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়াও অভিযোগ গিয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধন অধিদপ্তরে। এছাড়াও তার হয়রানীর শিকার একটি পক্ষ সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ডেভিল রাশেদকে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক করায় এবার দলের মধ্যেও বিদ্রোহ সৃষ্টি হচ্ছে। বিমানবন্দর থানা শাখা কমিটি গঠনের পর অনুপ্রবেশকারিদের পদ দেয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সিলেট বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিএনপির রাজনীতিকে কলঙ্কিত করতে এসব ডেভিলরা আওয়ামী লীগের এজেন্ট হয়ে দলে যোগদান করছে।

বিএনপির একটি বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, তার এসব অভিযোগ কেন্দ্র এবং যারা তাকে বর্তমানে শেল্টার দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে।

ওই সূত্র আরো জানায়, রাশেদুজ্জামান রাশেদকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সিলেট বিমানবন্দর থানা আহ্বায়কের পদ থেকে অপসারন করা হবে। এবং তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

সূত্র জানিয়েছে, গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জের কতোয়াল পুরের উত্তরপাড়ার মৃত সবুর মিয়ার ছেলে। রাশেদুজ্জামান রাশেদ ছিলেন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। সিলেট নগরের এয়ারপোর্ট থানাধীন খাসদবির এলাকায় তার বর্তমান বসবাস। রাশেদুজ্জামান রাশেদ ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিছবাহ সিরাজে অতি ঘনিষ্ঠজন। পলাতক সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামানেরও ছিলেন আস্তাভাজন ও একনিষ্ঠ ভক্ত। বিগত সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণাও চালান তিনি। ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কিছুদিন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান এই রাশেদ। সম্প্রতি তিনি আবার প্রকাশ্যে এসে শুরু করে দিয়েছেন বিএনপির রাজনীতি। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা থেকে হয়ে গেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাশেদুজ্জামান রাশেদকে সম্প্রতি সিলেট বিমানবন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের নামে সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিভিন্ন জাল দলিল সৃজন করে সরকারি সম্পত্তি, চা-বাগানের জায়গা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের নামে রেজিস্ট্রারী করার ও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রায় এক যুগ ধরে সিলেট সদর সাবরেজিস্ট্রারী অফিসে দলিল জাল-জালিয়াতি করে গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জের কতোয়াল পুরের উত্তরপাড়ায় দুই ভাইয়ের নামে কিনেছেন ২ একর জমি, প্রায় ২ কেটি টাকা খরচ করে বানিয়েছেন বাংলো বাড়ি, করেছেন বিশাল মাছের ফিসারি!

 

এসব অভিযোগের বিষয়ে রাশেদুজ্জামান রাশেদকে কল করলে তিনি বলেন, তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এর আগে তিনি বলেছিলেন, তিনি মিডিয়া ট্রায়েলের শিকার। এসব অভিযোগ মিথ্যা। তবে তিনি এও স্বীকার করেন, একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিএনপির নেতা জানান, রাশেদুজ্জামান রাশেদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সিলেট বিমানবন্দর থানা আহ্বায়কের পদ থেকে অপসারন করে দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করা প্রয়োজন। কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা আসলে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যেমন ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে, বিএনপিরও হবে। আর এর সুযোগ নিবে ৩য় পক্ষ!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ