ঢাকা ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:০৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২৪
বাংলা সিলেট ডেস্ক: সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র জাবির আহমদ (২২) আহমদ নিখোঁজ হননি, তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জাবিরের ভাই জামিল আহমদ সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেছেন। আদালত ঘটনাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) মামলার শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট জাফর ইকবাল তারেক ও অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মুকিত অপি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. আব্দুল মুকিত অপি বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ বিচারক আসমা জাহান ঘটনার তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, অপহৃত কলেজ শিক্ষার্থী জাবির আহমদ চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় দুবাগ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। সে উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের মেওয়া গ্রামের মো. আজমান আলীর ছেলে। তার পৈত্রিক বাড়ি উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের মাটিজুরা গ্রামে। ২০০১ সাল থেকে দুবাগ ইউনিয়নের মেওয়া গ্রামে জমি ক্রয় করে বসতি নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন মো. আজমান আলী।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, জায়গা-জমি সংক্রান্ত শত্রুতার জেরে বাদীর পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা মৃত জবেদ আলীর ছেলে সাংবাদিক আব্দুল খালিক, মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে আব্দুর রহিম ও সোয়া মিয়ার ছেলে আবু তাহেরসহ ৪-৫ জন সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্র বিগত ১১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাবির আহমদকে উপজেলার চারখাই বাজার থেকে অপহরণ করে। তার খোঁজ না পেয়ে ১২ অক্টোবর জাবিরের পিতা মো. আজমান আলী বিয়ানীবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যার নং-৫৫৯। অভিযুক্ত আব্দুল খালিক বাদীর পরিবারকে ভিটেমাটি ছাড়া করতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে গুম-খুনের হুমকি দিয়ে আসছিলেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাদের কাছ থেকে কয়েক দফায় লক্ষাধিক টাকা চাঁদাও নেন ওই আব্দুল খালিক।
ভুক্তভোগী জাবিরের ভাই জামিল আহমদ জানান, অপহৃত জাবির আহমদ গত ২৪ অক্টোবর একই কক্ষে থাকা আরেক অপহৃত কৌশলে পালিয়ে যাওয়ার সময় জাবিরের হাতের বাঁধন খুলে দিলে ভাগ্যক্রমে অপহরণকারী চক্রের হাত থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানায় আশ্রয় নেয় ভিকটিম জাবির। পরে খবর পেয়ে জাবিরের ভাই, আত্মীয়-স্বজন ও বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের সহযোগিতায় জাবিরকে উদ্ধার করে সিলেটে নিয়ে আসেন। পরে তাকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী জাবিরের ভাই জামিল আহমদ বলেন,‘ মেওয়া গ্রামের হেলাল উদ্দিন নামের একজনের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে আমরা বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছি। কিন্তু এরপর থেকেই ওই জমি নিজের দাবি করে আমাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার করছে আমাদেরই প্রতিবেশী সাংবাদিক নামধারী আব্দুল খালিক। এমনকি মামলা থেকে বাঁচতে তার কাছে গিয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলে সে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। সেই টাকাও কয়েক দফায় নেয়ার পরও সে আমাদেরকে রেহাই দেয়নি না।’
তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে আমার ছোট ভাই জাবিরকে রাস্তায় একা পেয়ে মারধরের চেষ্টা করেন সাংবাদিক আব্দুল খালিক। কিন্তু ওইদিন তার সহপাঠীরা তাকে ওই সাংবাদিকের হাত থেকে আমার ভাইকে উদ্ধার করে। তিনি বলেন, স্থানীয় এলাকায় আমাদের কারো সাথেই কোন শত্রুতা নেই। তাই সবকিছু মিলিয়ে আমাদের সন্দেহ হয়েছিল ওই সাংবাদিকই আমার ভাইকে অপহরণ করেছে।’
জামিল আহমদ বলেন, ‘সাংবাদিক পরিচয়ধারী আব্দুল খালিককে অভিযুক্ত করে বিয়ানীবাজার থানায় অভিযোগ করতে গেলে আমাদের মামলা গ্রহণ করা হয়নি। শুনেছি ওই সাংবাদিক নাকি বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সিনিয়র পর্যায়ের একজন নেতা। সে কারণে অনেক সাংবাদিক নাকি পুলিশকে মামলা গ্রহণ না করার জন্য প্রভাবিত করেন। নাম জানি না, আরেকবার দেখলে নাম চিনতে পারবো। দুজন সাংবাদিক আমাদেরকে অপহরণ মামলা দায়ের না করার জন্য খুব জোর-জবরদস্তি করেন।’
জাবিরের সহপাঠী মুবিন আহমদ বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষা চলার দ্বিতীয় দিন সকালবেলা আমরা কয়েকজন সহপাঠী জাবিরকে সাংবাদিক আব্দুল খালিকের কবল থেকে উদ্ধার করি। পরীক্ষা শেষে ফেরার সময় সকালের ঘটনার মতো লাঠি হাতে ওই সাংবাদিককে রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। পরে জাবিরকে একা যেতে না দিয়ে ফোন করে জাবিরের পরিবারকে ডেকে এনে তাদের হাতে তাকে তুলে দিই। সাংবাদিক আব্দুল খালিক ও জাবিরের পরিবারের মধ্যকার ঝামেলার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।’
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত আব্দুল খালিকের পৈত্রিক বাড়ি উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের বাঘবাড়ি গ্রামে। তারা বেশ কিছুদিন ধরে দুবাগ ইউনিয়নের মেওয়া গ্রামে বসতি গড়ে তুলেন। তিনি বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের একাংশের বর্তমান কমিটির সহ সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি নিজেকে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন।
অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিক আব্দুল খালিক বলেন, ‘আমি কেন তাদের ছেলেকে অপহরণ করবো? আমি এ ধরনের ঘটনার সাথে জড়িত নই। এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। তবে এটি ঠিক যে, তাদের সাথে আমার জায়গা-জমি সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমা চলমান আছে, যা আদালতে বিচারাধীন।’
তিনি বলেন, ‘মো. আজমান আলী গংসহ অন্যান্যদের সাথেও আমার জমি-জমা সংক্রান্ত একাধিক মামলা-মোকাদ্দমা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সেগুলোর কারণেই আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অভিযোগ তুলে আমার মানহানি করছেন। আমিও চাই তাদের নিখোঁজ ছেলে উদ্ধারের প্রকৃত ঘটনা সবার সামনে আসুক।’
তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘২০০৫ সালে মো. আজমান আলী কুয়েতে থাকাবস্থায় প্রভাব বিস্তার করে প্রশাসনের লোকজন পাঠিয়ে তাকে মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন।’
সম্পাদকীয় কার্যালয় : আছমান ম্যানশন, কদমতলী সিলেট। নিউজ : ০১৬-৪২৫০৫৪৬৬
Design and developed by DHAKA-HOST-BD