৫ আগস্টের পর ৪ দিন ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন আনোয়ারুজ্জামান

প্রকাশিত: ১১:৩০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০২৪

৫ আগস্টের পর ৪ দিন ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন আনোয়ারুজ্জামান

বাংলা সিলেট ডেস্ক: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে চলে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন থেকেই লাপাত্তা ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোরুজ্জামান চৌধুরী।

এরপর তিনি কোথায় ছিলেন, কীভাবে সিলেট তথা দেশ ছেড়েছেন এসব বিষয়ে তিনি গণঅভ্যুত্থানের সাড়ে ৩ মাস পর অনেক তথ্য দিয়েছেন। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের ওই সময়কার অবস্থান ও দেশত্যাগ সম্পর্কে কথা বলেন।

ছাত্র-জনতার মরণপণ আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এদিন ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সিলেটসহ সারা দেশে এরপর দলটির অনেক নেতাকর্মীই চলে যান আত্মগোপনে। এখন পর্যন্ত অনেকেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন, আর কেউ বা গ্রেপ্তার হয়ে আছেন জেলে। পালিয়ে যেতে সফল নেতাদের মধ্যে একজন সিসিকের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বর্তমানে লন্ডনে আছেন।

দৈনিক মানবজমিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘আমি ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সিলেট ক্যান্টনমেন্টে ছিলাম। সেখানে থেকে ১৪ আগস্ট বের হয়েছি।’

ক্যান্টনমেন্টে নিজ থেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, তারা আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছিলো। প্রত্যেকটা মানুষের কাছে তার ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার প্রথম। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, আপনি আশা করেন না যে, রাস্তায় কেউ আমাকে হত্যা করবে। আমি নির্বাচিত মেয়র সিলেটের। আমি যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঙ্গে কথা বলেছি তারা আমাকে ওয়েলকাম করেছে। তারা বলেছে, আপনি যেহেতু সিলেট সিটির নির্বাচিত মেয়র, সেহেতু আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। তারা আমাকে সসম্মানে সেখানে রেখেছেন।’

আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘আমি ১৭ আগস্ট লন্ডনে এসেছি। দীর্ঘদিন লন্ডনে ছিলাম। আমার পরিবার এখানে ছিলো। আমি সিলেটের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর প্রায় ৮ মাস দায়িত্ব পালন করেছি। তখন গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় ছিল জীবন রক্ষা। এজন্য প্রথম যে জিনিসটা সেটা হলো, নিরাপদ স্থানে যাতে আমরা নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারি। আমাদের কলিগ বা সহযোদ্ধাদের অর্থাৎ ছোট কর্মী থেকে বড় নেতা পর্যন্ত সবাইকে এই জিনিসটা বলেছিলাম যে, সেইফলি সবাই যেন সেফ জায়গায় চলে যায়।’

শোনা গেছে, আপনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ফ্লাইটে আসেননি (লন্ডনে)। তাহলে আপনি কোন রাস্তায় এসেছেন-এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার পাসপোর্ট দিয়েই আমি লন্ডনে এসেছি।’

ভারত হয়ে লন্ডনে গিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই খবরটা সঠিক না। রাইট চ্যানেল দিয়ে, বৃটিশ পাসপোর্ট দিয়েই আমি লন্ডনে এসেছি।’

চ্যানেলটা কী এমন প্রশ্নে সাবেক মেয়র বলেন, ‘যেভাবে মানুষ সবসময় আসে, এটাই।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতা করেছে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে সাবেক মেয়র বলেন, ‘তখন পর্যন্ত আমার নামে কোনো মামলা ছিলো না। আসার পর মিথ্যা মামলা দিয়েছে। প্রায় ২৬০টার উপর মামলা দিয়েছে এখন পর্যন্ত। যেহেতু আমার নামে কোনো মামলা ছিলো না, এজন্য তখন আসতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি।’

এদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন আনোয়ারুজআমান চৌধুরী। গত ৮ নভেম্বর নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে এই অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে ফেসবুকে দেওয়া ভিডিও-তে তিনি বলেন- ‘আমি একজন ভিকটিম। আমার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি একজন নির্বাচিত মেয়র, কিন্তু আমাকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং আমিসহ আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপর তারা আক্রমণ করেছে, নির্যাতন করেছে। এ জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মামলা করলাম।’

তিনি আরও বলেন- আমার মনে হয় আমিই প্রথম (অভিযোগ) শুরু করলাম। প্রায় ১৫ হাজার ভিক্টিম আছেন যারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করবেন।

ড. ইউনূস ছাড়াও ৬২ অভিযুক্তদের মাঝে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নাম রয়েছে।

এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, আব্দুল হান্নান, হাসিব আল ইসলাম ও আবু বকর মজুমদারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই অভিযোগে প্রায় ৮০০ পৃষ্ঠার নথি-পত্র যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।