ছাত্র আন্দোলন সিলেটের আহ্বায়ককে অব্যাহতি

প্রকাশিত: ৪:৪২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

ছাত্র আন্দোলন সিলেটের আহ্বায়ককে অব্যাহতি

বাংলা সিলেট ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলার আহ্বায়ক আকতার হোসেনকে সংগঠনের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যা বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাতে সংগঠনের সিলেট জেলার সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে (যার স্মারক নম্বর- সিলেট/জেলা/ফ/২৫) এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছিল।

ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেটের ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় নানা গুঞ্জন, আলোচনা-সমালোচনা।

তবে এই সিদ্ধান্তকে সাংগঠনিক নীতির পরিপন্থী উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) আখতার হোসেন অব্যাহতির সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, কমিটির ২৭২ জন সদস্যের মধ্যে ২৫৪ জন সদস্য ও কনভেনার বডির বেশীরভাগ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক, সদস্য সচিব এ বিষয়ে অবগত নয়।

পাশাপাশি এই সিদ্ধান্ত নৈতিকতার দিক দিয়ে সাংগঠনিক নীতির পরিপন্থী হিসেবে প্রতিয়মান এবং অগণতান্ত্রিক ভাবে সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত দেওয়ার পূর্ণ এখতিয়ার রাখে, এজন্য আমি এই সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, গত ২৩ মার্চ আমার নামে রজ্জুকৃত মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্তের কারণ দেখানো হয়েছে। অথচ ওই মামলাটি হল এনসিপির ইফতার মাহফিলে ‘এনসিপির ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সদস্যদের আভ্যন্তরীণ ভুল বুঝাবুঝির কারণে ধাক্কাধাক্কির পর্যায়ে গড়ায়।

আকতার হোসেন ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে শ্যামল সিলেটকে বলেন, আমি একজন দায়িত্বশীল হিসেবে মুঠোফোনে ঘটনার বিষয়ে অবগত হলে নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত মাহফিলস্থলে যাই এবং দু’পক্ষেরই সাথে সমঝোতার টেবিলে আসার আহ্বান জানাই।

আমার আহ্ববানে সারা না দিয়ে যা হওয়ার তা উপস্থিত সবাই দেখেছেন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আমাকে মামলায় আসামি করা হয়। আমার কনভেনার বডির অনেকেই সেই মামলার নামে ও অজ্ঞাতনামা আসামি।

মামলার পরেরদিন আমি গ্রেফতার হই এবং ওইদিনই আমি জামিনে মুক্ত পাই।

অব্যাহতির সিদ্ধান্তকে অন্যায় সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে আকতার হোসেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও সহযোদ্ধাদের আহ্বান করছেন অবস্থান নেওয়ার জন্য।

অব্যাহতির ব্যাপারে আকতার হোসেনের সাথে কথা বলে তিনি শ্যামল সিলেটকে বলেন, এই আলোচনায় নির্বাহী বডির ১১জনের মধ্যে ৮ জন উপস্থিত ছিলনা। কমিটির ২৭২ জন সদস্যের মধ্যে ১৮ জন উপস্থিত ছিল। তাও আবার এই ১৮ জনের মধ্যে অনেকের স্বাক্ষর জোরপূর্বক নেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।

এছাড়া বাকী ২৫৪ জনের মতামত নেওয়াই হয় নাই। এবং সেন্ট্রালের আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব এই বিষয়ে অবগত নয়।

তিনি এই সিদ্ধান্তকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং হিংসাত্মক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা শ্যামল সিলেটকে বলেন, “কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব তো নতুন রাজনৈতিক দলে গেছেন এখন ওই ব্যাপারে আমার সাথে আলাদা করে কোনো কথা হয় নি, এই ব্যাপারে আমি অবগত নয়। এটি আমাদের কারো সাক্ষরে যায় নি, এটা সিলেটের দায়িত্বশীলরা বলতে পারবে”।

কনভেনার বডি বা নির্বাহী কমিটি চাইলে আহ্বায়ককে অব্যাহতি দিতে পারে কি না এই প্রশ্নের জবাবে উমামা ফাতেমা বলেন, “ওটা সরাসরি আমাদের কোনো নিয়ম নাই তবে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক, সদস্য সচিব তাদের এখতিয়ার আছে”।

সেদিন ওই সভায় উপস্থিত থাকা জেলার সিনিয়র সংগঠক বলেন, “কোনো সংগঠনের জেলা আহ্বায়ক/সদস্য সচিবকে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের রয়েছে। কোনোভাবেই জেলার নির্বাহী বোর্ড, কনভেনার বডি অথবা পুরো জেলা কমিটি এই এখতিয়ার রাখেন না। তবে, জেলা কমিটি যদি যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে আহ্বায়কের অপসারণ চায়, তবে তা কেন্দ্রীয় কমিটির বিবেচনার জন্য প্রেরণ করতে পারে বলে তিনি জানান।

মিটিংয়ের সিদ্ধান্তগুলো আমার কাছে অসাংগঠনিক ও অযৌক্তিক মনে হওয়ায় আমি ফরমে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকি”।

সদস্য সচিব নুরুল ইসলামের বলেন, যে বিবৃতি আকতার হোসেন দিয়েছেন এটি তার ব্যক্তিগত, তিনি নিজেই নিজের সাফাই গেয়েছেন। নিজে স্বাক্ষর দিয়ে নিজের সাফাই গাওয়া হয় না। আমি যা দিয়েছি তা বার্তাপ্রেরক লিখে দিয়েছি, যা সাংগঠনিক নিয়মেই হয়েছে। আমার সংগঠনের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ যারা আছেন তাদের সাথে কথা বলে কনভেনারদের ডেকে স্বচ্ছতার জন্য সবাইকে নিয়েই দিয়েছি।

তার উপরের আরোপকৃত অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই কাজ আমি করিনি, আপনি যদি নোটিশ দেখেন তাহলে দেখবেন কোথাও লেখা নেই আমি আকতার হোসেনকে অব্যাহতি দিয়েছি, নির্বাহী ও কনভেনার বডির মতামতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আকরাম হোসেন রাজ যিনি আমাদের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল। আমরা তার সাথে কথা বলেছি, তিনি আমাদেরকে বলেছেন, আমরা নির্বাহী কমিটিতে যারা আছি, তারা যেনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই। এরপরও সচ্ছতার আমরা কনভেনার বডিতে যারা আছেন তাদেরকেও ডেকেছি।

কতজনের সম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের কনভেনার বডিতে মোট সদস্য ৩৯ জন এর মধ্যে ২ জন প্রবাসে আসাদুল্লাহ আল গালিব এনিসিপিতে যোগ দিয়েছেন এবং একজনের দুটি নাম্বার।

তন্মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষর নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর কয়েকজন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চলে গিয়েছিলেন”।

উল্লেখ মাত্র ৬ মাস মেয়াদি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলা কমিটি প্রকাশের পর থেকেই বিতর্ক যেনো তাদের পিছু ছাড়ছে না, এ নিয়ে নানা সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করতে দেখা যায় নেটিজনদের। এরকম একটি সুসংগঠিত প্লাটফর্ম বারবার বিতর্কের মুখে পরায় কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ