গোলাপগঞ্জের ‘সানি’ হত্যা: আদালতের মামলায় কি বলা হয়েছে…?

প্রকাশিত: ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪

গোলাপগঞ্জের ‘সানি’ হত্যা: আদালতের মামলায় কি বলা হয়েছে…?

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গোলাপগঞ্জের শিলঘাটে ‘সানি’ হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান কামাল সহ ৫১জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।

সোমবার সিলেট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন পুলিশ,বিজিবি ও আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহতের পিতা গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমুড়া ইউপির কুমারপাড়া শিলঘাট গ্রামের মৃত ওয়াহিদ আলীর ছেলে মোঃ কয়ছর আহমদ (৬০)।

আদালতের মামলায় বলা হয়েছে–গত ০৪/০৮/২০২৪ইং সময় অনুমান দুপুর ০১.০০ ঘটিকার সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সারা দেশ ব্যাপী কর্মসুচী পালনের অংশ হিসাবে ঢাকা দক্ষিণ এলাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রজনতা মিছিল সহকারে ঢাকা দক্ষিণ বাজার হইতে গোলাপগঞ্জ পৌরসভা চৌমুহনীতে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ঘটনার তারিখ ও সময়ে আইনশৃঙ্খলাকারী বাহিনীর সদস্য পুলিশ, বিজিবি ও আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, স্বোচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের দুষ্কৃতিকারীরা দেশী-বিদেশী অস্ত্রে- শস্ত্রে সজ্জিত হইয়া নিরস্ত্র ছাত্রছাত্রীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য ১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯, ১০,৩৫,৩৬,৩৭ ও ১৩ নং আসামীগণের হুকুমে বাকী অজ্ঞাতনামা সহ আসামীগণ অতর্কিত গুলি বর্ষণ করিতে থাকে, সমূহ আসামীগণের তাজাগুলিতে বাদীর ছেলে সানি আহমদের শরীরের বাম পাজরে ও কোমরের পিছনে ডান পাশে (পাচায়) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হইয়া মাঠিতে লুটিয়া পড়ে যান।

স্বাক্ষীগণ বাদীর ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাহাকে উদ্ধার করিতে গেলে আসামীগণ গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করিতে থাকে এতে স্বাক্ষীগণসহ তাহার অসংখ্য সহপাঠিরা গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত হয়। আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর আসামীগণের বর্বর হামলা দেখে স্থানীয় জনতা এগিয়ে এসে আসামীগণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললে আসামীগণ ঘটনাস্থল ত্যাগ করিতে বাধ্য হয়। আসামীগণ চলে যাওয়ার পর বাদীর ছেলের রক্তাক্ত লাশ স্বাক্ষীগণসহ ছাত্রজনতা উদ্ধার করে স্থানীয় গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে এবং এ্যাম্বুলেন্স যোগে পোষ্টমটেমের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে কর্তব্যরত ডাক্তার না পেয়ে সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাদীর ছেলে সানি আহমদের লাশ নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে পরের দিন (০৫/০৮/২০২৪ইং) সকাল ১০ ঘটিকায় দাফণ-কাফন সম্পন্ন করেন। দরখাস্থকারী বাদীর ছেলের মৃত্যুর দাফনের প্রচারণা অর্থাৎ মাইকিং করিতে গেলে ২৪নং আসামী নাজিম উদ্দিন লস্কর বাধা প্রদান করে।

৬নং আসামী আব্দুল আহাদ নুর মিয়া হুকুমের পাশাপাশি ঘটনার দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নাশকতা পরিকল্পনার বিভিন্ন তথ্যাদি ও খবরা খবর আদান প্রদান করে হত্যাকান্ডে সহযোগীতা করে। ৩৫নং হুকুমের আসামী গোলাপগঞ্জ উপজেলা ভ‚মি অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিৎ রায়ের নির্দেশে ৩৬ নং হুকুমের আসামী গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুল আমিন ও ৩৭ নং হুকুমের আসামী সুমন চন্দ্র সরকারের উপস্থিতিতে পুলিশ ও বিজিবির যৌথ ফোর্স আমার ছেলের বুকে গুলি করে।

পরবর্তীতে বাদী স্বাক্ষীগণসহ ঘটনাস্থলের আশে-পাশের লোকজনের মাধ্যমে জানিতে পারেন যে আসামীগণ তাহাদের হাতে থাকা দেশী-বিদেশী রাইফেল, শটগান, বন্ধুক ও পিস্তলসহ বিপদগামী কর্তব্যরত পুলিশ, বিজিবি ও আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা পূর্বপরিকল্পিত ভাবে আন্দোলনরত ছাত্রজনতার প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে অতর্কিত গুলিবর্ষণ করিয়া বাদীর ছেলে সানি আহমদকে প্রাণে হত্যাসহ শত শত সাধারণ ছাত্রজনতাকে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করেছে। সানিকে গুলি করে হত্যার পর তার লাশ ময়না তদন্ত করতে দেয়নি ৩৬ ও ৩৭ নং আসামী।

বাদীর ছেলের দাফন-কাফন ও দেশের সার্বিক অস্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আসামীগনের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সহ গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় এক খানা লিখিত অভিযোগ প্রদান করিলে থানা কর্তৃপক্ষ সহজ সরল বাদীর কাছ থেকে প্রয়োজন আছে বলে কয়েকটি সাদা কাগজে সাক্ষর রাখিলে এখন পর্যন্ত থানা কর্তৃপক্ষ কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় মামলা দায়ের করিতে বিলম্ভ হইল ।